ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?

ফ্রিল্যান্সিং কি?  কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?

 

আজকে আমি ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দিব। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব তা হল ফ্রিল্যান্সিং কি, কেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত, ফ্রিল্যান্সিং করার উপকারিতা বা বেনিফিট গুলো কি কি, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব,  কোথায় এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করব, ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যত কেমন, ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগতে পারে।  তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হল স্বাধীন বা মুক্ত পেশা।  কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়।  আর এই পেশার সাথে যারা যুক্ত থাকে তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার।

 

একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আমেরিকায় থাকা  একজন ব্যক্তি  চিন্তা করল যে সে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করবে  এবং এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে  সে তার ব্যবসা করবে।  এখন আমেরিকার সেই ব্যক্তিটি  পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা একজন ভালো  ওয়েব ডেভেলপারকে (যারা ওয়েবসাইট তৈরি করে)  দিয়ে তার কাজটি করিয়ে নেবে।  এবং সেই কাজটির জন্য সে ঐ ডেভেলাপারকে  ডলার দিবে।

 

এইখানে ওয়েব ডেভেলাপার যে পদ্ধতিতে আয় করল তাকে আমরা বলব ফ্রিল্যান্সিং  এবং সেই ওয়েব ডেভেলাপারকে আমরা বলব ফ্রিল্যান্সার। আশাকরি ফ্রিল্যান্সিং জিনিসটা বুঝতে পেরেছেন।


ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?


কেন আপনার ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত?

ফ্রিল্যান্সিং করার মূলত দুইটি কারণ রয়েছে।  প্রথমটি হচ্ছে স্বাধীনতা।  আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে টাকা।  এইখানে স্বাধীনতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।  ফ্রিল্যান্সিং করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে আপনি স্বাধীনতা পাবেন। এরপরে আমি ফ্রিল্যান্সিং করার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।  তখন আপনি খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনার কেন ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত।


আরো পড়ুনঃ কিভাবে মোবাইল দিয়ে অনলাইন ইনকাম করা যায়? 

ফ্রিল্যান্সিং করার উপকারিতা বা বেনিফিট গুলো কি কি?

এখন আমি যদি ফ্রিল্যান্সিংকে জব এর সাথে তুলনা করি।  তাহলে দেখা যাবে জবের ক্ষেত্রে আপনাকে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত অফিস করতে হবে।  অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি যখন খুশি তখন কাজ করতে পারবেন। 

 

আবার জবের ক্ষেত্রে প্রতিদিন আপনাকে একই কাজগুলো করতে হবে,  যা অনেক বিরক্তের।  একই দিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি চাইলে বিভিন্ন কাজ করতে পারবেন।  এই জন্য ফ্রিল্যান্সিং করে আপনি অনেক মজা পাবেন এবং সেই একঘেয়ামি জিনিসটা থাকবে না।

 

তাছাড়া জবের ক্ষেত্রে আপনি যতটুকু সময় দিচ্ছেন তার তুলনায় অনেক কম স্যালারি পাবেন।  একই দিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি জবের তুলনায় অনেক কম সময় দিয়ে অনেক বেশি টাকা ইনকাম করে নিতে পারবেন।

 

জবে আপনাকে অনেক দূর পর্যন্ত ট্রাভেল করতে হয়।  কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি আপনার ঘরে বসেই সব কাজ করতে পারেন।

 

জবে আপনার বস থাকবে এবং তার কথা অনুযায়ী আপনাকে সব কাজগুলো করতে হবে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনার কোন বস থাকবে না। আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন।

 

জবের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, অনেক সময় আপনি আপনার পরিবারকে সময় দিতে পারবেন না।  কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি আপনার পরিবারকে যথেষ্ট সময় দিতে পারবেন।


ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?


ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করাটা অনেক সহজ।  প্রথমে আপনি যে কোন একটি টপিক সিলেক্ট করেন।  যেই টপিকটি আপনার ভালো লাগে।  সেটা হতে পারে ডিজাইনিং, হতে পারে প্রোগ্রামিং  হতে পারে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের আরো অনেক সেক্টর আছে আপনি চাইলে সেইগুলোও চাইলে সিলেক্ট করতে পারেন। 

 

ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে আপনাকে যে কোনো একটি বিষয়ে ভালো পারতে হবে বা যেকোনো একটি বিষয় আপনার দক্ষ হতে হবে। এবং অবশ্যই এমন একটি টপিক সিলেক্ট করবেন যে এই টপিকে মার্কেটে ভালো চাহিদা  আছে।  

 

এখন আপনি যদি এমন একটা টপিক সিলেক্ট করেন যেটা খুব সহজ এবং মার্কেটে সেটার তেমন কোনো চাহিদা নাই, সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ে তেমন সফল হতে পারবেন না। 


আরো পড়ুনঃ ইউটিউব টিপস এবং ট্রিক্স । ইউটিউবে সফল হওয়ার উপায়

কোথায় এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কোথায় এবং কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করবেন।  ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মার্কেটপ্লেস রয়েছে।  যেমনঃ-  ফাইবার,  আপওয়ার্ক,  পিপল পার আওয়ার  ইত্যাদি।  

 

আপনার যখন যে কোন একটি বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে শেখা শেষ হয়ে যাবে  এবং  যখন আপনি সেই বিষয়ে কাজ করতে পারবেন,  তখনই এই ধরনের মার্কেটপ্লেসে আসবেন।  এখন আপনি যদি কাজ না শিখেই এধরনের মার্কেটপ্লেসে আসেন,  তাহলে আপনি কিন্তু কোন কাজ করতে পারবেন না।  

 

এবং বর্তমানে  ফ্রিল্যান্সিংয়ে  কম্পিটিশন আগের তুলনায় বেড়েছে। তাই আপনি যদি এই সেক্টরে  ক্যারিয়ার গড়তে চান,  তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভালো কাজ জানতে হবে।  আপনি যদি ভালো কাজ জানেন তাহলে আপনার  মার্কেটপ্লেসে ভালো চাহিদা থাকবে।  আর আপনি যদি ভালো কাজ না শিখেন,  তাহলে আপনি বেশিদূর   আগাতে পারবেন না। 

 

তাই প্রথমে ভালোভাবে কাজ শিখুন,  তারপরে  এই ধরনের মার্কেটপ্লেসে কাজ  করবেন। আবার আপনি যদি মার্কেটপ্লেসে ভাল মতন কাজ করেন তাহলে দেখা যাবে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে পার্মানেন্টলি হায়ার করে নিবে। সে ক্ষেত্রে আপনি ঘরে বসেই আপনার সেই ক্লায়েন্টের কাজ করে দিতে পারবেন।

 

আর এই সেক্টরে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে।  মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ আনা খুব একটা সহজ না।  একটু ধৈর্য ধরলে  এবং ভালো কাজ করলে  আপনি ঠিকই সফল হতে পারবেন।  যারা সত্যিই এই সেক্টরে কাজ করতে চান বা এই সেক্টরটি নিয়ে  সিরিয়াস  তারাই শুধু  ফ্রিল্যান্সিংয়ে আসতে পারেন।

 

অনেক মানুষই  অন্যদের দেখে ফ্রিল্যান্সিং করতে আসে।   তারা দেখে যে, অমুক ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক টাকা ইনকাম করল,  এই জিনিসটা দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করতে চান।  কিন্তু আপনার মধ্যে যদি সেই ইচ্ছা  বা ধৈর্য না থাকে তাহলে  আপনার এইদিকে না আসাই ভাল।

 

অনেকেই কাজ না পেয়ে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেয়।  এমনটা করলে কিন্তু হবে না আপনাকে ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে।  তাহলে দেখবেন একদিন আপনিও সফল হবেন।  এখন আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে দেন তাহলে আপনি এই বড় সুযোগটি হাতছাড়া করবেন।

 

এখন অনেকেই প্রশ্ন করে যে,   " ফ্রিল্যান্সিংয়ের সেক্টর গুলো কি কি?  আমি কি ভাবে এই  জিনিসগুলো শিখব বা কোথায় থেকে শিখব? "  এই প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে আপনার কাছে ইউটিউব আছে। আপনি চাইলেই ইউটিউব থেকে যে কোন একটি ফ্রি কোর্স করে এই বিষয়গুলো  ফ্রিতেই  শিখে নিতে  পারেন। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন ধরনের ইনস্টিটিউট আছে।  আপনি চাইলে সেখানে টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে  শিখতে পারেন। 

 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন লাগতে পারে?


এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার  টপিকের উপর।  যেমন ভালো মতো ওয়েব ডেভেলপিং শিখতে গেলে  আপনাকে  এক বছরের মত  সময় দিতে হবে।  আবার আপনি চাইলে একমাসেই ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিতে পারেন।  তাই ফ্রিল্যান্সিং  শিখতে আপনার কতদিন লাগবে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে যে আপনি কোন বিষয়ের উপর কাজ করতে চাচ্ছেন। 



ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?



ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কেমন?

ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়া কি লাভজনক।  আজ থেকে বিশ ত্রিশ বছর পরও কি ফ্রিল্যান্সিংয়ের একই জনপ্রিয়তা থাকবে।  চলুন এই বিষয়ে কথা বলি।


যত দিন যাচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।  ফ্রিল্যান্সিং পেশা থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ১ ট্রিলিওন ডলারেরও বেশি  ইনকাম করছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপির ৫% এর কাছাকাছি। আপওয়ার্ক বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করছে। ২০২০  সালে আপওয়ার্ক ৩৬৩ থেকে ৩৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।


ফ্রিল্যান্সিং কি? কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব?



আইসিটি বিভাগ অনুসারে,  বাংলাদেশে ৬,৫০,০০০  ফ্রিল্যান্সার  আছে।  যাদের মধ্যে ৫,০০,০০০  ফ্রিল্যান্সার সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে


বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক টাকা ইনকাম করছে ফ্রিল্যান্সিং থেকে।  যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ২% এর কাছাকাছি। আগামী বছরগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং আরো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তাই আপনি যদি যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ ভাবে কাজ করতে পারেন,  তাহলে অবশ্যই ফ্রিলেন্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন।

 

আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন যে ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করতে হবে,  ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা কি কি , ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যত কেমন। আপনি যদি ভালোমতো কাজ শিখতে পারেন।  এবং ভালোমতো কাজ করতে পারেন।  তাহলে অবশ্যই আপনি সফলতার মুখ দেখতে পারবেন।  আপনার যদি ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে আরো কোন প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আজকে এই পর্যন্তই।  ধন্যবাদ সবাইকে।